
প্রকাশিত: Sat, Jun 8, 2024 2:56 PM আপডেট: Tue, Apr 29, 2025 11:37 PM
মানুষের মধ্যে যখন জ্ঞানের পূর্ণতা আসে, তখন তার অহংকার দূর হয়ে যায়
স্বকৃত নোমান
হেন কোনো বই নেই, যা জালাল উদ্দিন রুমি পড়লেন না। হেন কোনো জ্ঞান নেই, যা রুমি অর্জন করলেন না। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যায় তাঁর তৃষ্ণা মিটছে না। কেবলই মনে হচ্ছে কোথাও যেন খামতি রয়ে গেছে, কোথাও যেন একটা শূন্যতা রয়ে গেছে। কিন্তু শূন্যতাটা কীসের, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সেসব দিনের একদিন দেখা হলো শামস তাবরিজের সঙ্গে। শামস তাবরিজ মজ্জুব। অর্থাৎ পাগল কিসিমের। ঠিক পাগল নয়, ফকির বলা যেতে পারে। দীনহীন। সেই অর্থে তাঁর বাড়িঘরও নেই। যেখানে রাত, সেখানে কাৎ। অনেকটা প্রাচীন গ্রিকের সিনিকাল দার্শনিকদের মতো। তিনি এসব পুঁথিগত বিদ্যার ধার ধারেন না। তিনি আত্মজ্ঞানী। লালনের মতো। লালন যেমন বলেছেন, 'আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে/নিজ তত্ত্বে নিরঞ্জন পেয়েছে। তাবরিজও নিরঞ্জনকে পেয়ে গেছেন। একদিন রুমি গেলেন তাবরেজির কাছে, তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে। কেননা তিনি বুঝতে পারছিলেন তাঁর তৃষ্ণা একমাত্র শামস তাবরিজই মেটাতে পারবেন। তাবরিজ বললেন, আমি মদ খাব, তুমি আমার জন্য এক বোতল মদ নিয়ে আসো। কী বিপদ। রুমি তখন বিখ্যাত পণ্ডিত, অধ্যাপক। যাকে বলে মাওলানা। চারদিকে তাঁর খ্যাতি। তাবরিজের জন্য শুঁড়িখানা থেকে মদ আনবেন, লোকে দেখলে কী বলবে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। তাবরিজের হুকুম তামিল করতেই হবে। নইলে শিষ্য হওয়া যাবে না।
রুমি গেলেন মদের দোকানে। দোকানদারকে বললেন, আমার ঘোড়ার সর্দি হয়েছে, এক বোতল মদ দাও। সেই কালে ঘোড়ার ঠান্ডা লাগলে মদ খাওয়ানো হতো। দোকানদার দিল এক বোতল মদ। রুমি বোতলটা এনে রাখলেন তাবরিজের সামনে। তাবরিজ বললেন, শেষ পর্যন্ত তুমি আমাকে ঘোড়া বানালে। হবে না, এই মদে হবে না। যাও, দোকানদারকে গিয়ে বলো যে তুমিই মদ খাবে। তোমার জন্য যেন এক বোতল মদ দেয়। রুমি আবার গেলেন দোকানে। নিজের জন্য এক বোতল মদ চাইলেন দোকানদারে কাছে। বোতলটা জামার নিচে লুকিয়ে আনলেন তাবরিজের কাছে। তাবরেজি বললেন, না, এই মদও আমি খাব না। এটা তুমি লুকিয়ে এনেছ। মদ তোমাকে প্রকাশ্যে আনতে হবে, সবার সামনে দিয়ে। তবেই আমি খাব।
রুমি তাই করলেন। এবার বোতলটা মাথায় করে সবাইকে দেখিয়ে আনলেন। তাঁর মাথায় মদের বোতল দেখে লোকজন ছি ছি করতে লাগল, ধিক্কার দিতে লাগল। শেষ পর্যন্ত মাওলানা রুমি মদ্যপ হয়ে গেলেন। এই দৃশ্যও দেখতে হলো। কারো কথা কানে না তুলে রুমি বোতলটা এনে রাখলেন তাবরিজের পায়ের কাছে। তাবরিজ বললেন, মদ আমি খাব না। এক কাজ করো, এই মদ দিয়ে তোমার জায়নামাজ রাঙিয়ে দাও। তাবরিজ আসলে রুমির পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। রুমির আমিত্বের বিসর্জন দেওয়াচ্ছিলেন, তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান লুপ্ত করে দিচ্ছিলেন। গুরু শামস তাবরিজ সম্পর্কে রুমি তাঁর ‘মসনবি’ কাব্যে লেখেন, ‘খোদ বখোদ কামেল না-শুদ মোল্লায়ে রুম/তা গোলামে শামসে তাবরিজে না-শুদ।’ অর্থাৎ আমার গুরু শামস তাবরিজের দাসত্ব না করা পর্যন্ত আমি রুমি নিজে নিজে পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি।’
শামস তাবরিজের শিষ্যত্ব গ্রহণের আগে রুমি ছিলেন কিছুটা অহংকারী। জ্ঞানের অহংকার। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের (সবাই নয়) মতো আরকি। তাবরিজের শিষ্যত্ব গ্রহণের পর একদিন তিনি রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন। দরজার সামনে দেখতে পেলেন একটি কুকুর ঘুমাচ্ছে। তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তাঁর ছাত্র দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করল। রুমি বললেন, কুকুরটা ঘুমাচ্ছে। আমি ঘরে ঢুকতে গেলে তার ঘুমটা ভেঙে যাবে। তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো ঠিক হবে না। রুমি তাঁর ‘মসনবি’তে বলেছেন, মানুষের মধ্যে যখন জ্ঞানের পূর্ণতা আসে তখন তার অহংকার দূর হয়ে যায়। সে হয়ে ওঠে বিনয়ী। তার কাছে তখন সকল জীব সম-মর্যাদার হয়ে ওঠে। মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীকে সে আর আলাদা করে না। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
